আমরা আজকাল দিন কে করেছি রাত, রাতকে করেছি দিন। বাচ্চাদের মধ্যে অনেকেই রাতে ঘুমায় না, গার্ডিয়ান এর আদেশ মানেনা। আমরা এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছি যখন গার্ডিয়ান হাল ছেড়ে দেয় ছেলেমেয়েদের কে বোঝাতে বোঝাতে। আবার হাতের স্মার্টফোনের ফোন এর কারনে আজকাল কিছু গার্ডিয়ানও রাতে জেগে থাকে।
আপনি আশেপাশে এমন অনেক উদাহরণ পাবেন। কেউ কাজ করে পেটের দায়ে, আর কেউ করে শখে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই রাত জাগা নিশাচর। রাত জেগে জেগে তাদের ঘুমের সময় হয় ভোরে।
একটা সময় শুধুমাত্র রোজার দিনে প্রতিটি ঘরে রাত ৩-৫ টায় আলো জ্বলে উঠতো। আর এখন সারা রাত আলো খুব কম বাসায় নিভে। এখন সারা রাত সজাগ থেকে কেউ ভোরে ঘুমায়।
আসুন জেনে নেই কিছু অপ্রিয় সত্য।
নিয়ম কি, আর আমরা করছি কি?
রাতের খাবারের মিনিমাম ৪ ঘন্টা পর ঘুমানোর কথা বলা হয়। আমরা কি তাই করছি? না, আমরা খাবার খেয়ে বিছানায় চলে যাই।
একটা গল্প বলি। নাম তার সুস্মিতা। বয়স ২০। ভার্সিটিতে পড়ে। খুব ভালো স্টুডেন্ট।
সুস্মিতা রাত জেগে পড়ে, সকালে ভার্সিটিতে যায়, বিকেলে এসে হাল্কা নাস্তা খায়। মন চাইলে খায়, না হয় সন্ধ্যায় ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠে রাতের খাবার খায়। রাতের খাবার খেতে খেতে ১১ টা বেজে যায়। সারা রাত জেগে ভোরে একটু ঘুমায়। সকালে কোন সময় খায়, আবার সময় না পেলে, না খেয়ে ভার্সিটি যায়।
এতে কি হয় জানেন? দিনের পর দিন এই অনিয়মের কারণে সুস্মিতার বেশ কিছু সমস্যা হওয়া শুরু হয়, যেমনঃ
- প্রচন্ড গ্যাস সমস্যা হলো।
- শরীর প্রচন্ড জ্বলে,বুক জ্বলে।
- টয়লেট ক্লিয়ার হয়না। দুই থেকে তিনবার হয়, আবার অনেক সময় দুই দিন হয় না।
- মেজাজ খিটমিট করে।
- অল্পতে রাগ আসে,মনে দুঃখ লাগে।
- স্কিন লাল লাল হয়।
- গরম গরম অনুভব হয় সারাক্ষণ।
- হাত পা এর তালু জ্বলে।
- হাতে পা এ সারা শরীরে ফুসকুড়ি এলার্জী।
- অতিরিক্ত চুল পড়া সমস্যা।
- খুশকীর সমস্যা।
এখন, এই সকল সমস্যা গুলো কেন একসাথে দেখা দিলো?
প্রতিদিন রাত জাগার জন্য বিশেষ কিছু হরমোন রিলিজ হতে বাধা পায়। আমাদের সবার রাতে ঘুমানোর কথা, কিন্তু রাত জেগে জেগে সেটা পরিবর্তন হয়ে গেলো। বেশির ভাগ মানুষ রাতে ১১ টার পর যতক্ষণ সজাগ থাকে কিছু না কিছু খেতেই থাকে। কিন্তু কথা ছিলো ঘুমাতে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে কিছু খাওয়া যাবেনা।এতে জঠরাগ্নির কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে।
এমন অনেক মানষ আছেন যারা ভোরে ঘুমানোর আগে ফ্রিজ টা খুলে যা কাছে পায় খেতেই থাকে। যা সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাহার। এর অপকারিতা বিশাল। এটা কখনোই করা উচিৎ না।
আপনারা কি জানেন, মানুষ এ শরীরে রস দুই প্রকার এর তৈরী হয়?
এক,পরিপক্ব রস।
দুই,অপরিপক্ক রস।
এখন অপরিপক্ক রস থেকে শরীরে আম বা টক্সিন জমে যা হাড়ের জয়েন্ট সহ নানাবিধ জায়গায় বসে বসে টক্সিন এর কারনে সমস্যা তৈরী করে। ক্যালসিয়াম খেলেই কি তার কাজ হয়? ভিটামিন সি খাই তো? এই দুটো একে অপরের সাথে সংযোগ।
তাই আপনি বা আমরা যখন রাত জাগি আমাদের পিত্ত বেড়ে গিয়ে আমাদের টোটাল মেটাবলিজম বিপাকক্রিয়ার কার্যক্রম এ ট্রাফিক এর ন্যায় ভুমিকা পালন করে। এতে আমাদের এনজাইম গুলো তাদের আসল কাজ গুলো সুন্দর করে করতে পারেনা।
সূর্যের সাথে আমাদের প্রতিদিন এর জীবন যাপন এর একটা ঘড়ি আছে। সেটা তিন বডি প্রকৃতির আলাদা আলাদা, যা আমরা পড়ে এসেছি আয়ুর্বেদ এ। এই কথাটা প্রফেটিক মেডিসিন এর সাথে ও মিলে। সূর্য যতক্ষন থাকে ততক্ষণ আমাদের জেগে থাকার কথা। কিন্তু আমরা জেগে থাকার সময় ঘুমাই, ঘুমানোর সময় জেগে থাকি।
আর এতে আমাদের হাইড্রোক্লোরিক এসিড সিক্রেশন এ আমাদের শরীর এসিটিক হয়ে আমাদের পিত্ত বেড়ে ত্রিদোষ এর বিকৃতি ঘটে।
রাতে আপনি জাঙ্ক ফুড খাচ্ছেন। সেটা খাওয়ার পর কোন সময় না দিয়েই আবার মিষ্টি ডেজার্ট, তারপর কোলড্রিংক, এর পর কোন সময় না দিয়ে আবার চিপস, পুডিং আরো অনেক কিছু। ভিতরের অর্গান মিলিটারী বাহিনীকে শুধু বার বার তাদের কাজে পানি ঢেলে দিচ্ছেন। তারা ডিস্টার্ব হলে আপনারই ক্ষতি।
আপনি জানেন কি? খাওয়ার পর পানি খেতে হয়না, কারন পেটের স্টমাক তার কাজ করতে যে অগ্নির সাহায্য নেয় সেটাতে আপনি পান ঢেলে দিলে হয় হজমে দেরী। হজমে দেরী তাতে টয়লেট গন্ডগোল হয়। তার জন্য দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। আর সকালে টয়লেট সমস্যা তার মানে সারাদিন ধরে মাথা ব্যথা, মেজাজ চিটচিটে। আরও কতকিছু। আর সারাদিন ধরে এসবের জন্য আসেপাশে সকলের সাথে মেজাজ আর মেজাজ এর একটা বিচ্ছিরি অবস্থা তেরী হয়।
রাতে সারাক্ষণ আপনি ফোন টিপছেন, তাতে ফোনের রেডিয়েশন আপনাকে কতটা বিপদ এ ফেলছে সেটা সময় বলে দিবে।
আজকাল ভালো কথা গুলো আমাদের বই আর পরীক্ষায়!
এত যে লেখা লিখি কেউ একটা কমেন্ট করবে তো দূর এত বড় লেখা ও পড়ার প্রয়োজন মনে করেনা।যত বিকৃত বিচ্ছিরি জিনিস হয় ভাইরাল।তাতেই বোঝা যায় আমাদের রুচির কতটা বিকৃতি হচ্ছে যখন কোন ইন্সিডেন্ট ঘটে তখন নড়েচড়ে বসি আমরা। তদন্ত করি, কিন্তু মানসিক অশান্তিতে আজকাল তরুন প্রজন্ম কতটা অস্থির কয়জন সেটা নিয়ে বসে? ঘরে ঘরে স্টুডেন্ট রা রাতের পর রাত ঘুমায় না ফোন নিয়ে বসে থাকে।তাদের কে না বকে, না ধমকিয়ে, বরং কাউন্সেলিং করানো জরুরী।
আমি মনে করি আমাদের গভঃ এর এই ব্যাপারে প্রতিটি ভার্সিটিতে, মহল্লায়,মসজিদে,বিশেষ কাউন্সেলিং ইউনিট খোলা প্রয়োজন। আমাদের অনেক পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে কোন মতেই পারেনা। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর ভুমিকা আরো বাড়িয়ে তুলতে হবে এই রাতজাগা মানুষদেরকে বোঝানোর জন্য।
এসব চলতে থাকলে শরীর এর ত্রিদোষ বিকৃত হয়ে জটিল রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে এটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই সাবধান হোন আজই।